![]() |
আইএম বিডি এজেন্সি লিমিটেডের সিইও শামীম আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত |
বর্তমানে বাংলাদেশে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র ভয়ঙ্করভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা প্রযুক্তিকে হাতিয়ার বানিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কর্মসংস্থানের অভাব ও বেকারত্বের হারকে পুঁজি করে তারা ‘সহজ আয়’-এর লোভ দেখিয়ে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। এই প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে এখনই প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা।
প্রতারণার কৌশল: ‘বিশ্বাস’ গড়েই শুরু হয় ফাঁদ
এই প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামসহ জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে বার্তা পাঠায়। তারা নিজেদের নামকরা কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং আকর্ষণীয় ‘পার্ট টাইম’ চাকরির প্রলোভন দেখায়—যা মোবাইল ফোনে ঘরে বসে করা যায়, আর মাসিক আয় নাকি ২০-৩০ হাজার টাকা!
প্রথমে তারা ছোট একটি কাজ দেয়, যেমন ইউটিউব ভিডিও দেখা বা ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট করা। কাজের পর স্ক্রিনশট দিলেই ভুয়া পোর্টালে ব্যালেন্স দেখায় এবং কিছু টাকা বিকাশ বা নগদে পাঠিয়ে দেয়। এতে ভুক্তভোগীর মনে বিশ্বাস জন্মে, এবং সে ফাঁদে পা দেয়।
আসল ফাঁদ: টাকার লোভে বিনিয়োগ
একবার বিশ্বাস অর্জিত হলে শুরু হয় প্রকৃত প্রতারণা। আরও বেশি বেতনের কাজ দেওয়া হয়, পোর্টালে জমে ২০-৫০ হাজার টাকার ব্যালেন্স। কিন্তু টাকা তুলতে গেলে বলা হয় ‘অ্যাকাউন্ট অ্যাকটিভ’ করতে টাকা পাঠাতে হবে। কেউ কেউ ৫-১০ হাজার টাকা তো দেয়ই, কেউ কেউ দেয় এক লাখ পর্যন্ত! টাকা পাঠানোর পর প্রতারক ব্লক করে দেয়—তখন ভুক্তভোগী বুঝলেও কিছু করার থাকে না।
কারা আছে এই চক্রের পেছনে?
এই চক্রের সদস্যরা প্রযুক্তিতে দক্ষ, পরিকল্পিতভাবে কাজ করে। তারা প্রান্তিক জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম কিনে হোয়াটসঅ্যাপ/টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলে। এমনকি অন্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মেসেঞ্জারেও প্রতারণা চালায়। এজেন্ট নিয়োগ করে, যারা নিজেরাও প্রতারণার শিকার হয়ে এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে।
প্রতিরোধ ও করণীয়
✅ ব্যক্তিগত সতর্কতা:
সহজ আয়ের লোভে পড়বেন না: নামকরা কোম্পানি কখনো হোয়াটসঅ্যাপে চাকরি দেয় না। সবসময় যাচাই করুন: অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা জব পোর্টাল থেকে সত্যতা যাচাই করুন। কাউকে টাকা পাঠাবেন না: চাকরি বা আয় তোলার জন্য কখনো টাকা দিতে হয় না। ব্যক্তিগত বিকাশ/নগদ নম্বরে লেনদেন করবেন না: খুব সহজেই ভুয়া মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
✅ প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উদ্যোগ:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ: বিকাশ/নগদ নম্বর ট্র্যাক করে প্রতারকদের শনাক্ত করতে হবে।সরকারি গণবিজ্ঞপ্তি ও গণমাধ্যমে প্রচার: প্রতারণার কৌশল ও সতর্কতা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা জরুরি। ইনফ্লুয়েন্সার ও এক্সপার্টদের এগিয়ে আসা: সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়াতে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
শেষ কথা
শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার কোনো নিরাপদ ও বৈধ পথ নেই। প্রযুক্তির সুফল তখনই কাজে লাগবে, যখন আমরা সচেতনভাবে ব্যবহার করব। আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও সতর্কতাই পারে এই ভয়ঙ্কর ডিজিটাল প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
এই প্রতিবেদনটি কালবেলা নিউজের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।
0 Comments